নেফ্রনের গঠন

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র | - | NCTB BOOK

নেফ্রনের গঠনঃ

মানুষের বৃক্কের সূক্ষ্ম গঠন বলত্ব নেফ্রনের গঠনকেই বোঝায়।

নেফ্রনের সংখ্যাঃ

প্রত্যেক বৃক্কে ১০ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ নেফ্রন আছে।প্রতিটি নেফ্রন প্রায় ৩ সে.মি. লম্বা।এ হিসেবে প্রত্যক বৃক্কের নেফ্রনের নালিকাগুলাে সম্মিলিতভাবে ৩৬কিলোমিটার(প্রায় ২২.৫ মাইল) এরও বেশি লম্বা। বৃক্কের মাধ্যমে প্রতি মিনিটে রক্ত থেকে ৫ ঘন সেমি. তরল পদার্থ পরিশ্রুত হয় কিন্তু প্রায় ৯৯% পানিই আবার রক্তে ফিরে যায়, সাধারণত প্রতি মিনিটে কেবল ১ ঘন সেমি. মূত্র সৃষ্টি হয়।

নেফ্রনের গঠনঃ ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে বােম্যান (Bowman) প্রথম নেফ্রনের গঠন বা বৃক্কের সূক্ষ্ম গঠনের সঠিক বর্ণনা দেন।

নেফ্রনের বিভিন্ন অংশঃ প্রতিটি নেফ্রনকে প্রধান ২টি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যথা-

ক.  রেনাল করপাসল (Renal corpuscle)

নেফ্রনের সম্মুখ ভাগকে রেনাল করপাসল বা মালপিজিয়ান বডি বলে। কর্টেক্স অঞ্চলে অবস্থিত এটি প্রায় ২ মি.মি. ব্যাসের একটি গােলাকার অংশ। বােম্যান্স ক্যাপসুল এবং গ্লোমেরুলাস সমন্বয়ে মালপিজিয়ান বডি নিয়ে গঠিত। রেনাল করপাসল ২টি অংশে বিভক্ত যথা-

১. বােম্যানস ক্যাপসুল

রেনাল করপাসলে গ্লোমেরুলাসের কৈশিকজালিকাগুচ্ছকে ঘিরে অবস্থিত ০.২ মি.মি ব্যাসের ও আঁইশাকার এপিথেলিয়ামে গঠিত দ্বিস্তরী পেয়ালার মতাে প্রসারিত অংশকে বােম্যানস ক্যাপসুল বলে। এর গ্লোমেরুলাস সংলগ্ন স্তরকে ভিসেরাল স্তর, বহিঃপ্রাচীরকে প্যারাইটাল স্তর এবং দুই স্তরের মাঝখানে অবস্থিত গহ্বরকে ক্যাপসুলার স্পেস বলে। ভিসেরাল স্তরটি পােডােসাইট (podocyte) নামক বিশেষ ধরনের প্রবর্ধন কোষে এবং প্যারাইটাল স্তর স্বাভাবিক আঁইশাকার এপিথেলিয়াল কোষে নির্মিত।

২. গ্লোমেরুলাস

বােম্যানস ক্যাপসুলের অভ্যন্তরে ঘনিষ্ঠভাবে গ্লোমেরুলাস অবস্থান করে। রেনাল ধমনি থেকে একটি ক্ষুদ্র অন্তর্বাহী ধমনিকা বা অ্যাফারেন্ট আর্টারিওল (afferent অ্যাফারেন্ট আর্টারিওল (arteriole) বােম্যানস ক্যাপসুলে প্রবেশ করে এবং ৫০-৬০টি কৈশিক জালিকায় বিভক্ত হয়ে গ্লোমেরুলাস গঠন করে। কৈশিকজালিকাগুলাে পুনরায় মিলিত হয়ে বহির্বাহী ধমনিকা বা ইফারেন্ট আর্টারিওল(efferent arteriorle) রূপে বােম্যানস ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসে। ইফারেন্ট আর্টারিওলের ব্যাস অ্যাফারেন্ট আর্টারিওলের চেয়ে কম হওয়ার কারণে। গ্লোমেরুলাসে সর্বদা উচ্চ রক্তচাপ বজায় থাকে।

কাজ

রেনাল করপাসল-এ রক্তের আল্ট্রাফিলট্রেশন ঘটে এবং রক্ত থেকে রেচন বর্জ্য, পানি ও অন্যান্য দ্রব্য পরিদশ্রুত হয়ে গ্লোমেরুলারস ফিলট্রেট (glumerulars filtrate) হিসেবে বােম্যানস ক্যাপসুলে জমা হয়।

খ. রেনাল টিউবিউল

রেনাল করপাসলের নিচ থেকে শুরু করে সংগ্রাহী নালিকা পর্যন্ত লম্বা নল কে রেনাল টিউবিউল বলে। এটি ৪টি অংশ নিয়ে গঠিত।যথাঃ

১. নিকটবর্তী প্যাচানাে নালিকা

বােম্যান্স (Bowmon’s) ক্যাপসুলের সাথে সংযুক্ত প্রায় ১৪ মি.মি. দীর্ঘ নালিকাকে নিটবর্তী প্যাঁচানাে নালিকা বলে। নেফ্রনের এ অংশটি বৃক্কের কর্টেক্স এ অবস্থিত। এর প্রাচীর একস্তর এপিথেলিয়াল কোষ দিয়ে গঠিত কোষগুলাের প্রান্তে অসংখ্য মাইক্রোভিলাই থাকে।

২. হেনলির লুপ

নিকটবর্তী পাচানাে নালিকার শেষ প্রান্ত সােজা হয়ে বৃক্কের মেডুলা অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং একটি U আকৃতির ফাঁস বা লুপ গঠন করে পুনরায় কর্টেক্স অঞ্চলে ফিরে আসে একে হেনলির লুপ বলে। নিম্নগামী নালিকাকে অবরােহন বাহু বলে। এ অংশে পানি পুনঃশােষণ ঘটে। U আকৃতি লুপের উর্ধ্বগামী নালিকাকে আরােহন বাহু বলে। এ অংশে Na ও Cl আয়নের পুনঃশশাষণ ঘটে।

৩. দূরবর্তী প্যাচানাে নালিকা

এটি হেনলির লুপের পরবর্তী প্যাঁচানা নালিকা। এটি ৫ মি.মি. লম্বা এবং কর্টেক্সে অবস্থান করে। এর প্রাচীর একস্তর বিশিষ্ট এপিথেলিয়াল কোষ দিয়ে গঠিত এবং শেষ প্রান্ত সংগ্রাহী নালিকার সাথে যুক্ত। এখানে পানি পুনঃশােষণ ঘটে।

৪. সংগ্রাহী নালিকা

প্রতিটি নেফ্রনের দূরবর্তী প্যাচানাে নালিকা একটি অপেক্ষাকৃত মােটা সােজা নালির সাথে যুক্ত থাকে যাকে সংগ্রাহী নালি বলে। এর প্রাচীর কিউবয়ডাল কোষ দ্বারা গঠিত। কিছু সংগ্রাহী নালি একত্রিত হয়ে বেলিনির নালি গঠন করে। অনেকগুলাে বেলিনির নালি একত্রে মেডুলার প্যাপিলারী নালীর মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত পেলভিসে উন্মুক্ত হয়। সংগ্রাহী নালি পরিত তরলকে আইসােটনিক তরলে পরিণত করে যা রক্তরসের সমতুল্য। এ নালি পরিস্রত ও পুনঃশােষিত তরল সংগ্রহ করে গবিনীতে প্রেরণ করে।

নেফ্রনের কাজঃ

১. পরিস্রাবণ (Filtration) : নেফ্রনের গ্লোমেরুলাস রক্তের প্রােটিন ছাড়া প্রায় সকল উপাদান ছাঁকনির মাধ্যমে পৃথক করে বােম্যানস ক্যাপসুলের গহ্বরে প্রেরণ করে।

২ পুনঃশােষণ (Re-absorption) : বৃক্কীয়নালিকার পরিশ্রুত তরলের প্রয়ােজনীয় পদার্থগুলাে যথা : গ্লুকোজ,অধিকাংশ লবণ এবং প্রয়ােজনীয় পানি প্রভৃতি পুনরায় শােষিত হয়ে রক্তনালিতে প্রবেশ করে।

৩. নালিকার ক্ষরণ (Tubular Secretion): বৃক্কীয় নালিকা যে শুধু পুনঃশশাষণের কাজ করে তাই নয়, এটি কয়েক ধরনের দূষিত পদার্থ, যেমন- নানা প্রকার সালফারঘটিত যৌগ, ক্রিয়েটিনিন এবং কয়েক প্রকার জৈব এসিড ইত্যাদি রক্তপ্রবাহ থেকে নালিকার গহ্বরে ক্ষরণ করে।

৪. নতুন পদার্থ সৃষ্টি (Manufacture of New Substrances) : বৃক্কীয় নালিকার এপিথেলিয় কোষে কয়েক ধরনের যৌগ, যেমন- অজৈব ফসফেট, অ্যামােনিয়া, হিপপিউরিক এসিড ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। এগুলো বৃক্কীয় নালিকার গহবরে যুক্ত হয়।

৫. ph মাত্রা নিয়ন্ত্রণ (Balancing of pl): দেহস্থিত ph এর সঠিক মাত্রা রক্ষা করে।

নেফ্রনের প্রকারভেদঃ

বৃক্কের কর্টেক্সে নেফ্রনের ম্যালপিজিয়ান বডি বা রেনাল করপাসলের অবস্থানের ভিত্তিতে মানুষের নেফ্রন তিন।

১. সুপারফিসিয়াল কর্টিকাল নেফ্রন (Superficial cortical nephrons) :

এগুলাের করপাসল বৃক্কের কর্টেক্সের বহির্ভাগের এক মিলিমিটারের মধ্যে অবস্থান করে। বৃক্কের ৮৫% নেফ্রনই এ প্রকৃতির। এগুলাের হেনলির লুপ খাটো।

২. মিড কর্টিকাল নেফ্রন (Midcortical nephrons) :

এগুলাের রেনাল করপাসল কর্টেক্সের মাঝামাঝিতে অবস্থান করে। এদের লুপ খাটো বা লম্বা হয়ে থাকে। বৃক্কের মাত্র ৫% নেফ্রন এ প্রকৃতির।

৩. জাক্সটামেডুলারি নেফ্রন (Juxtamedulary nephrons) :

এগুলাের রেনাল করপাসল কর্টেক্সের গভীরে মেডুলার সংযােগস্থলের ওপরে অবস্থান করে। এসব নেফ্রনের হেনলির লুপ অনেক লম্বা। বৃক্কের ১০% নেফ্রন এ ধরণের।

common.content_added_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

ভ্রূণীয় মেসোডার্ম খেকে সৃষ্ট হয়
প্রত্যেক বৃক্কে ১২ কোটি নেফ্রন থাকে
নেফ্রনগুলো মাঝে মাঝে ও সরল প্রক্রিয়ায় রক্ত থকে নাইট্রোজেন বর্জ্য পৃথক করে
ভ্রূণীয় এক্টোডার্ম থেকে সৃষ্টি হয়

সরল প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে নাইট্রোজেন বর্জ্য পৃথক করে

প্রত্যেক বৃক্কে 10 কোটি নেফ্রন থাকে

ভ্রূণীয় এক্টোডার্ম থেকে সৃষ্ট হয়

ভ্রূণীয় মেসোডার্ম থেকে সৃষ্ট হয়

টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion